হে আমার ছেলে
হে আমার ছেলে
শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী
প্রকাশক :
যায়নুল আবেদীন বিন নুমান
শিক্ষক, মাদরাসা ইশাআতুল ইসলাম আস-সালাফিয়্যাহ, রাণীবাজার, রাজশাহী।
দাওরায়ে হাদীস (মুমতায), বি.এ. (অনার্স) ফার্স্ট ক্লাস থার্ড, এম.এ. ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট,
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকাশনায় :
কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে রচিত তথ্য সমৃদ্ধ কিতার প্রকাশে সচেষ্ট ব্যতিক্রমধর্মী
ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী
প্রধান শাখা: রাণীবাজার, রাজশাহী।
০১৭৩০-৯৩৪৩২৫, ০১৯২২-৫৮৯৬৪৫
দ্বিতীয় শাখা: সোনাদিঘী মোড়, সাহেব বাজার, রাজশাহী।
০১৭৩০-৯৩৪৩২৫, ০১৯২২-৫৮৯৬৪৫
ওয়েব:
http://wahidiyalibrary.blogspot.com/
ইমেইল:
wahidiyalibrary@gmail.com
হে আমার ছেলে! প্রত্যেক পিতাই চায়, তার সন্তানের সফলতা, চায় উন্নতি। তাই সে তার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে সন্তানকে উপদেশ দেয়, স্মরণ করিয়ে দেয় তার জীবনের সফলতা, ব্যর্থতার দিকগুলো। বিশেষ করে একজন পিতা যখন জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়, তখন তার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে সন্তানের পথকে আলোকিত করতে চায়। এ আশায় যে, তাঁর জীবনের সফলতার দিকগুলো হবে সন্তানের পথের দিশা এবং ব্যর্থতাগুলো হবে শিক্ষা।
হে আমার ছেলে! বহুদিন থেকে আমি মনে মনে ভাবছি, তোমাকে আমার জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শুনাবো, কিছু উপদেশ দিবো। তারই আলোকে আজ তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। মনোযোগ দিয়ে তা শুনলে এবং মেনে চললে আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি অবশ্যই সফল হবে।
হে আমার ছেলে! আমরা কেউই আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিগত নির্ধারণের বাইরে নই। কিন্তু তাই বলে আমি তোমাকে উপদেশ না দিয়ে ছেড়ে দিতে পারিনা। আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ তাআলা ভালো-মন্দ দু'টোই সৃষ্টি করেছেন এবং কল্যাণ-অকল্যাণের পথ দেখানোর সাথে সাথে ভালো পথ নির্বাচন করার আদেশ দিয়েছেন এবং ক্ষতিকর পথ এড়িয়ে চলার হুকুম করেছেন।
হে আমার ছেলে! তোমার উপর আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বড় আদেশ হলো, তুমি এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে। এ জন্যই তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর সবচেয়ে বড় নিষেধ হলো, তুমি তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবেনা।
আল্লাহর সৎবান্দা লোকমান আলাইহিস সালাম তাঁর ছেলেকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছেন,
﴿یٰبُنَیَّ لَا تُشْرِكْ بِاللهِﺛ اِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِیْمٌﭜ﴾
“হে প্রিয় বৎস! আল্লাহ্র সাথে শরীক করোনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ্র সাথে শরীক করা মহা যুলুম”। (সূরা লুকমান-৩১:১৩)
ইয়াহইয়া বিন যাকারিয়া আলাইহিস সালাম একদা বনী ইসরাঈলকে বাইতুল মুকাদ্দাসে একত্রিত হওয়ার আহবান জানালেন। তারা যখন তাতে একত্রিত হলো, তখন তিনি তাদেরকে সর্বপ্রথম যে উপদেশটি দিয়েছিলেন, তা হলো,
হে লোক সকল! আল্লাহ তাআলা আমাকে পাঁচটি আদেশ করেছেন। যাতে আমি নিজে সে অনুযায়ী আমল করি এবং তোমাদেরকেও সে অনুযায়ী আমল করার আদেশ দেই। তোমরা এককভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করবেনা। কেননা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করার উদাহরণ হলো যেমন কেউ তার খাঁটি স্বর্ণ-রৌপ্যের মুদ্রা দ্বারা একজন চাকর খরিদ করলো। অতঃপর চাকরকে বললো, এই হলো আমার বাড়ি, এই হলো আমার কাজ। তুমি কাজ করো এবং আমার হক আদায় করো। কিন্তু চাকর তার মনিবের কাজ বাদ দিয়ে অন্যের কাজ শুরু করলো। কে আছে তোমাদের মধ্যে চাকরের এহেন আচরণকে পছন্দ করবে?
লোকমান তাঁর ছেলেকে আল্লাহর হকের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার সাথে সাথে পিতা-মাতার অধিকারের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর বলেছেন, হে বৎস! কোনো পাপ যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি কোনো পাথরের ভিতর অথবা আকাশম-লিতে অথবা মাটির নীচে লুকিয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। অতএব ছোট-খাট গুনাহ থেকেও দূরে থাকবে।
হে আমার ছেলে! স্বলাত কায়েম করো, সৎকাজের আদেশ দাও, অসৎকাজে বাধা দান করো এবং বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করো। এটা নিশ্চয়ই দৃঢ় সংকল্পের কাজ।
হে আমার ছেলে! মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলোনা এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে চলোনা। কেননা আল্লাহ কোনো দাম্ভিক ও অহংকারীকে ভালোবাসেন না। তুমি তোমার চলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করো, তোমার আওয়াজ নীচু করো। আওয়াজের মধ্যে গাধার আওয়াজই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।
যুল ইসবা আলআদওয়ানী তার ছেলেকে জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো অতি সংক্ষেপে এভাবে শুনাতে গিয়ে বলেছেন, হে আমার ছেলে! আমার বয়স শেষ হয়ে গেছে। যদিও আমি এখনো জীবিত আছি। আমি এত দীর্ঘ বয়স পেয়েছি যে, জীবন আমার কাছে দুঃসহ হয়ে পড়েছে। আমি এ মুহূর্তে তোমাকে এমন কিছু উপদেশ দিচ্ছি, যা সংরক্ষণ করলে তুমি তোমার জাতির নিকট আমার মতই উচ্চ আসনে পৌঁছতে পারবে। সুতরাং উপদেশগুলো তুমি মন দিয়ে শ্রবণ করো।